প্রকাশিত:
১১ আগষ্ট ২০২৩, ১৯:৫৬
আজকের তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। কিন্তু এ সমাজের অনেকেই আজ নানা কারণে দিকভ্রান্ত। পতঙ্গের মতো লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলার পরিবর্তে উদ্যমহীন। গোড়া কাটা গাছের ন্যায় যেন নেতিয়ে পড়ছে দিন দিন। আসলে তরুণ সমাজের কিছু চিহ্ন ক্ষত হয়ে দেখা দিয়েছে। ক্ষত নিজের হলে তার ব্যাথা অনুভব করা সহজ হয়।
আমি দশম শ্রেণীর ছাত্র। আমার হাতে একটা মুঠোফোন। আমি প্রযুক্তির যাঁতাকলে পিষ্ট। শুধু আমি একা নই; এই মিলিছে কোটি কোটি মুখ। এক অজানা প্রান্তের খোঁজে ছুটে বেড়ায়। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার মতো তরুণের জয়-জয়কার। সময়ের দিকে খেয়াল নেই মোটেও। এক ঘন্টার জন্য ফেসবুকে ঢুঁ মারতে এসে কয়েক ঘন্টা অপচয় হয় তার খেয়াল থাকছে না কারুর। পড়াশোনা গোল্লায়!
আগে বড় ভাইয়েরা নাকি শিক্ষকের হাতে কঞ্চির বাড়ি খেয়ে পড়াশোনা করত। পড়া না পারলে মায়ের কানমলা থাকত। বাইরে ঘুরতে গেলে বাসায় না বলে গেলে বাপের ধমক থাকত নিশ্চিত। এখন আর কিছু নেই। কেন নেই তার উত্তরও জানা! যা দেখছি শিক্ষকরাও নানা মতাদর্শে বিভক্ত। তা হতেই পারে। কিন্তু আদর্শের জায়গায় শিক্ষকরা ঠিক থাকবেন এটা শিক্ষার্থীদের অধিকার। বর্তমানে দলান্ধ, ধর্মান্ধ, নতজানু শিরের শিক্ষকদের কাছে থেকে তরুণ সমাজ কি শিখবে এটাই প্রশ্ন।
এখন শিক্ষকদের তাদের আদর্শ মনে করছে না। নতুন প্রযুক্তি পণ্যের আগ্রাসন জীবন যাপনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারো থেকে আঠেরো বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের দিকে তাকালে বোঝা যায় আমরা কতটা বেপরোয়া। লকডাউনের উছিলায় ঘরবন্দি থাকা অবস্থায় অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজন দেখিয়ে মা-বাবার কাছে থেকে ব্যক্তিগত স্মার্টফোন কিনেছি আমরা। এখন এই স্মার্টফোন স্কিনে আসক্ত। পাড়ার মোড়ে, শহরের অলিতে গলিতে ভিড় করে চলছে ফ্রী-ফায়ার, পাবজিসহ নানা ধরনের অনলাইন গেমস্ এর আসর। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে ৩ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল আবদার! কতটা গ্রহণযোগ্য এসব।
গত দু-বছরের প্রেক্ষাপটের দিকে দৃষ্টিপাত করলে তরুণদের ঘরবন্দি থাকা অবস্থায় এক যুগান্তকারী বিপ্লবের আভাস পাওয়া যায়। তাদের অনলাইনে অবাধ বিচরণ চোখে পড়ার মতো, ফেসবুক ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের চলাফেরা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। মেগাবাইট কেনার টাকা না পাওয়ায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়ংকর অপরাধ জগতে পা রাখতেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে না তারা। মোটরসাইকেলের জন্য আত্মহত্যার ঘটনা এইতো সেদিনের।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সন্তানের বিপথে যাওয়ার হাত থেকে একমাত্র রক্ষা করতে পারে পিতা মাতার ভূমিকা। আমার মতো তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে তার আত্মীয়স্বজন ও পিতামাতাকে। ছেলে-মেয়ে কার সাথে উঠাবসা করছে, কার সাথে সময় কাটায় সবকিছু নজরে রাখা। সন্তানের সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচারণ করা, তাকে বোঝানো। প্রয়োজনে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, সুন্দর সুন্দর বই পড়নো। ধর্মীয় মূল্যবোধের জাগ্রত করা এবং কালচার শেখানো।
বাসার টেলিভিশনটা খাওয়ার রুমে নিয়ে আসা। ছেলের ব্যবহৃত কম্পিউটারটা একা ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য ডাইনিয়ের একপাশে জায়গা করা। যেখানে সবার চোখ পড়বে। মাঝেমধ্যে তার কাছে বসে মনিটরিং করা; ছেলে-মেয়ে কি করছে!
একইসাথে আইন করে তরুণ তথা আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন। যাতে কিশোররা অনলাইনে অবাধ বিচরণ করতে না পারে। অন্তত সোস্যাল মিডিয়া থেকে তরুণদের বাঁচাতে পারলে অনেকাংশে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে।
লেখাটি লিখেছেন নাটোর শেরকোল সমজান আলী উচ্চ বিদ্যালযয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র প্রত্যয় সাহা। ই-মেইল: [email protected] ।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: