মনিরামপুরে দপ্তরি নিয়োগে ঘুষ বানিজ্য, মাথা প্রতি ১৫ লাখ
-2023-05-18-19-31-45.jpg)
যশোরের মণিরামপুরে ৪৬টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকুলে দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী নিয়োগে কোটি কোটি টাকার অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এমপির পরিবারের বিরুদ্ধে। একই পদের বিপরীতে তিন-চারজনের কাছ থেকে সাত থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত টাকা নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীদের পক্ষে ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করার পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২২ জুন নিয়োগসংক্রান্ত এক পরিপত্র জারির আলোকে ২৮ জুনের মধ্যে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বরাবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আগ্রহী প্রার্থীদের দরখাস্ত দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী মণিরামপুরের ৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী পদের বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন শ চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেহালপুর ইউনিয়নের এক ব্যক্তি বলেন, তিনি তাঁর নাতির চাকরির জন্য স্থানীয় এমপির এক স্বজনের সঙ্গে ১০ লাখ টাকায় রফা করেছিলেন। কিন্তু খবর পেয়েছেন যে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে অন্য একজনের চাকরি হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সদস্যসচিব করে ছয় সদস্যের নিয়োগ বোর্ড গঠিত হয়। ওই বোর্ড আবেদনকারীদের কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই করে ২ ও ৩ জুলাই মৌখিক পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করে। ফল প্রকাশের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩ জুলাই আর নিয়োগপত্র ইস্যুর তারিখ দেওয়া হয় ৫ জুলাই। কিন্তু পরে ৬ জুলাইয়ের মধ্যে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে আবার ৭ ও ৮ জুলাই পরীক্ষার নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু ওই চিঠিতে পরীক্ষার ফল ঘোষণার সময় উল্লেখ করা হয়নি। পরে ৯ জুলাই ফল প্রকাশের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ফল প্রকাশ করা হয়নি।
সূত্র মতে, প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে ৭ থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত টাকা নেওয়া হয়। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীদের পক্ষে ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করার পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করেন।
এদিকে নিয়োগের ফলাফল বিলম্বিত হওয়ায় চাকরিপ্রত্যাশীদের মাঝে উদ্বেগ, উত্কণ্ঠা ও হতাশা বিরাজ করছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাপস কুমার অধিকারী বলেন, সবার সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে ফল প্রকাশে দেরি হচ্ছে বলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁকে জানিয়েছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যসচিব আশীষ কুমার নন্দী দাবি করেন, নিয়মনীতি মেনেই সব করা হয়েছে, অনৈতিক সুবিধার কোনো প্রশ্নই আসে না।
সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ অতুল গণমাধ্যমকে জানান, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে তিনি বদলি হওয়ার আগেই চাকরিপ্রত্যাশীদের নাম স্থানীয় এমপির কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি চাইলে এ তালিকাই চূড়ান্ত করতে পারেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার নাম বলে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে এর দায় আমার নয়। আমি কাউকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে কোনো টাকা নিইনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন লাভলু গণমাধ্যমকে বলেন, এ নিয়ে নানান ধরনের কথা শুনতে পাচ্ছি। তবে কেউ আমার কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। শুনতে পেলাম, এখনো নাকি নিয়োগ চূড়ান্ত হয়নি। সে পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: