[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

পূজামণ্ডপে ফুটে উঠেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
২৩ অক্টোবার ২০২৩, ১৭:১৩

ছবি: পূজামণ্ডপে ফুটে উঠেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য

আজ মহানবমী। নবমীর রাতে শেষ হয় উৎসব। নবমী রাতে বিদায়ের ঘণ্টা বাজে মণ্ডপে মণ্ডপে। আর পরদিন কৈলাসে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। দুর্গাপূজার অন্তিম দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয় নবমীকে। ভক্তদের কষ্ট দূর করতে এ বছর দেবী দুর্গা এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে আর আগামী মঙ্গলবার দশমীর দিন বিদায় নেবেন এই একই বাহনে। সারাদেশের মতেই রাজশাহীতেও প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে হয়েছে। পাশাপাশি মণ্ডপ সজ্জার শিল্পীদের কাজও শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে নজর কেড়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কুঁড়েঘরের এক মণ্ডপ। ঐতিহ্যবাহী এই মণ্ডপ দেখতে ভিড় করেছেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কুঁড়েঘরের মতই সাজানো হয়েছে মণ্ডপটি। মন্দিরের প্যান্ডেলের চারটি পিলারের নাম জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে বাঙালী জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে সেই ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে পূজামণ্ডপটি। আর ওপরে বাংলাদেশের ইতিহাস লিখিত এক ব্যানার।

রাজশাহী মহানগরীর মালোপাড়ার শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরের পূজামণ্ডপটি যেন একটা বাংলাদেশ! মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং সংগ্রামের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মকে জানাতে এবার শারদীয় দুর্গোৎসবে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরের এই সৃজনশীল আয়োজন। এমন আয়োজন এবার আলাদা করে দৃষ্টি কেড়েছে নগরবাসীর।

মন্দিরটিতে গিয়ে দেখা যায়, আলপনা অঙ্কিত ঐতিহ্যবাহী গ্রাম-বাংলার কুঁড়েঘরের মাঝে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সবই ফুটে উঠেছে এক পর্দায়। ফ্রেমের সবার উপরে বড় করে লেখা রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাল ১৯৭১। এর প্রতিটা অঙ্ক অর্থাৎ ১ দিয়ে বোঝানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে এক তর্জনীর হুংকার, ৯ অর্থ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ, ৭ অর্থ ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ এবং ১ মানে একটি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর এক তর্জনীর হুংকারে নয়মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ অর্জনের কথা বলা হয়েছে এতে।

এর নিচে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ এর সাধারণ নির্বাচন, ’৬৬ এর ছয়দফা, ’৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯ এর গণঅঅভ্যুত্থান, ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধর ছবির পাশাপাশি সবার বোঝার সুবিধার জন্য রয়েছে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। সেইসাথে ব্যানারে ফুটে উঠেছে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা ও জাতীয় চার নেতার কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ডও। ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতকরণের জন্য দেশব্যাপী যে গণজাগরণ হয়েছিল, তাও বর্ণীত রয়েছে একই ফ্রেমে। ২০২১ সালের দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ক্ষত যে এখনও সংখ্যালঘুদের মাঝে রয়েছে তা বোঝানোর জন্য এর প্রতিবাদও স্থান পেয়েছে ফ্রেমে।

দেশব্যাপী উন্নয়নের অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্র স্থান পেয়েছে ফ্রেমের উন্নয়ন অংশে। বাংলাদেশের মেয়েরাও যে আজ পিছিয়ে নেই। তারাও যে বিশ্বকে জয় করতে পারে তা বোঝানোর জন্য সাফ চাম্পিয়ানে বাংলাদেশের মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়ের ছবি যে তা স্মরণ করে দেয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শিক্ষানগরী রাজশাহী যে পিছিয়ে নেই তা বোঝানোর জন্য গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি রাজশাহীর বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক ছবি স্থান পেয়েছে ফ্রেমের শেষ অংশে।

আর ফ্রেমের সবার উপরে বড় করে লিখা রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাল ১৯৭১ যার প্রতিটা অঙ্ক যেন প্রকাশ করে এক তর্জনীর হুংকারে নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সঙ্গে শিক্ষানগরী রাজশাহীও যে পিছিয়ে নেই তা বোঝানোর জন্য এ শহরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ছবিও স্থান পেয়েছে ফ্রেমের শেষ অংশে।  প্রতীমা দর্শনে গিয়ে অনেকে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে সেসব ছবি দেখছেন, দেশের ইতিহাস জানছেন।

শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক পাপন চন্দ্র রায় বললেন, ‘দশভুজা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে ধরণিতে আবির্ভূত হন। দেবী দুর্গার আরধনার সময়কে ধরা হয় সকল প্রকার অশুভ-অসত্যকে পরাভূত করে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার শুভ সময়। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন সাজে ও আঙ্গিকে দেবী দূর্গার আরাধনার আয়োজন করে থাকেন। আমরা এমনভাবে মণ্ডপটাকে সাজিয়েছি, যেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি এখানে উঠে আসে। সবার মনে যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জাগ্রত হয়।’

এদিকে এই পূজার আনন্দ নির্বিঘ্নে পালন করতে রাজশাহী মহানগরীসহ জেলা জুড়ে র‌্যাবের নিরাপত্তা বলায় থাকার কথা জানিয়েছেন র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক অধিনায়ক লে. কর্ণেল রিয়াজ শাহরিয়ার। তিনি বলেন,  র‌্যাব ৫ এর আওতাধীন সকল জেলায় এই নিরাপত্তার চাদরে বিস্তৃত করা হয়েছে। পূজা মন্ডপসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বোম ডিসপোজাল টিম কার্যক্রম চালিয়েছে। যাতে যেকোন উদ্ভূত পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করতে পারি।নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোস মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ভার্চুয়াল জগনের প্রপাগন্ডা চালানো প্রতিরোধে কাজ করছে। সাদা পোষাকে র‌্যাব সদস্যরা তৎপর রয়েছে। এই পূজাকে কেন্দ্র করে কেউ নাশকতা তৈরী করলে কঠোর হস্তে দমন করার কথা জানান র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে আরএমপি’র পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও আরএমপি’র অপারেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার হতে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। তিনি বলেন, থানার অফিসার ইনচার্জগণকে পূজা কমিটির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। যাতে করে দর্শনার্থীরা নির্ভিঘ্নে পূজামন্ডপ দর্শন করতে পারে।

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর