[email protected] শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, ছাত্রলীগ নেতাসহ আসামি ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি

প্রকাশিত:
১৮ আগষ্ট ২০২৩, ২৩:৩৭

ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জালিয়াতির অভিযোগে ভর্তিচ্ছু ও ছাত্রলীগ নেতাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী আহসান হাবীব, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, শের-ই-বাংলা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, সাকিব ও বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষা এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র সাকায়েন সিদ্দিক প্রাঙ্গণ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগে ভর্তি হতে মায়ের সঙ্গে স্যার জগদীশ চন্দ্র অ্যাকাডেমিক ভবনে আসেন আটক আসামি আহসান হাবীব। ভর্তি হয়ে ভবন থেকে বের হয়ে আসলে অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন ব্যক্তি আহসান হাবীবকে অপহরণ করে শের-ই-বাংলা হলের তৃতীয় তলায় আটকে রাখে। এরপর অপহরণকারীরা মুঠোফোনে তার বাবার কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

এদিকে দীর্ঘক্ষণ ছেলের খোঁজ না পেয়ে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান আহসান হাবীবের মা। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে প্রক্টর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আহসান হাবীব স্বীকার করেন যে, তিনি বাকি আসামিদের সহযোগিতায় প্রক্সির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান।

এজন্য পলাতক আসামি প্রাঙ্গণের সঙ্গে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা চুক্তি হয়। ভর্তির পূর্বে তিনি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং বাকি টাকা ভর্তির পর দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু ভর্তির পর তিনি সেই টাকা না দেওয়ায় বাকি আসামিরা তাকে অপহরণ করে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন।

অপরদিকে সন্তানকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে প্রধান আসামি করে আরও তিনজনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে আটক আহসান হাবীবের মা রেহেনা বেগম। অপর তিনজন আসামি হলেন- রাজু আহমেদ, প্রাঙ্গণ ও সাকিব।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময় বলেন, ‘আমি এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে এসব করছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের ১ শতাংশ প্রমাণ হলে আমি যে কোনো শাস্তি গ্রহণ করব।’ এ ছাড়া অভিযুক্ত অন্যদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘যেই ছেলের মা তন্ময়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আমি তাকে কোনোদিন দেখি নাই, কথাও হয়নি। তাহলে আমি এটা কীভাবে করতে পারি। তন্ময়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যার কোনো ভিত্তি নেই।’

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মতিহার থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। একটি পাবলিক পরীক্ষা আইনে অপরটি অপহরণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। আরেকটি মামলা করেছেন আহসান হাবীবের মা রেহেনা বেগম।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী আহসান হাবীবকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এই জালিয়াতির সঙ্গে তন্ময়ের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল।

তার এই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গতকাল রাতেই আমরা ৫ জনের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় এজাহার দায়ের করেছি। এখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরও কয়েকজন শিক্ষার্থী আছেন। আজ ও আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় রোববার হয়তো আমরা তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’

 

বাংলা গেজেট/এফএস

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর